মোঃআবু কাওছার মিঠু 
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রæপের টায়ার তৈরির কারখানায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় অন্তত ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

আজ ২৬ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট চেষ্টা করে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত গাজী টায়ারস কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

কারখানার গেইটে নিখোঁজদের খুঁজতে আসা স্বজনরা জানায়, গত ২৫আগষ্ট রবিবার গাজী গ্রæপের টায়ার তৈরির কারখানায় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা  কারখানায় ছুটে আসেন। এর পর তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি। নিখোঁজদের মধ্যে মুড়াপাড়া দরিকান্দী গ্রামের মামুন, জহিরুল, জাকির হেসেন, স্বধীন, ইব্রাহিম, তারাবো পৌরসভার বরপা গ্রামের স্বপন, আসাদ, সোহাগ, আবু সাঈদ, মানিক, রতন, বকুল, জিন্নাত, মৈকুলী গ্রামের রাজ, ছাব্বির, ফয়েজ, সুজন। তাদের বয়স ১৫বছর থেকে ৪০ বছর বয়স। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, আমরা নিখোঁজদের একটি খসড়া তালিকা করেছি। এ মুহূর্তে তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। স্বজনরা যারা দাবি করছেন তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখছি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত এ তালিকায় ১৭৬ জনের নাম লেখা হয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে তারা কেউ কারখানার শ্রমিক নন। সবাই বহিরাগত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টায় গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে শত শত মানুষ এসে সেখানে জড়ো হন। খবর পেয়ে ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে।

পর্যায়ক্রমে ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী, ইপিজেড ও কাঞ্চন ফায়ার স্টেশন থেকে একে একে যোগ দেয় ১২টি ইউনিট। ভবনটির ভেতরে আটকা পড়ে অনেক লোক। অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যায়নি।

ওই সময় থেমে থেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনায় আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। আটকা পড়াদের পরিবার-পরিজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে কারখানা এলাকা। তাতে আশপাশের এলাকায় শিল্প কারখানা ও এলাকার লোকজনের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করে।

গত ২৪ আগষ্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রæপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খবর পেয়ে সর্বশ্রেণির মানুষ কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চালায়। আগুন লাগার সময়ও লুট করতে কারখানার ভেতরে গিয়ে ৪/৫ শতাধিক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন। এসময় দুইতলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই নিচে লাফিয়ে পড়েন। অন্যরা বের হতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, অবকাঠামোগত ও ভেতরে থাকা টায়ার উৎপাদনের দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারের ব্যাপারটি জটিল হয়ে পড়ে। কী কারণে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি।

আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

আগুন লাগার পর শত শত মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্র ও উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে লুটপাট চালাতে গিয়ে ৪/৫ শতাধিক মানুষ ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে উঠে পড়েন। সেখান থেকেও লুটপাট শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে ভবনের নিচতলায় দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ছয়তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভেতরে আটকে পড়া অনেকেই আর বের হতে পারেননি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১২টি ইউনিট কাজ করে। রাজধানীর সিদ্দিকবাজার থেকে টিটিএল মেশিন এনে কারখানার ওপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ছয়তলা ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরণের দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভেতরে কি পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছিলেন তা কেউ বলতে পারেনি।

খবর পেয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান মাহমুদ রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবহিনীর একটি প্রতিিিনধি দল, বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান হাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যাবসায়ীদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, গাজী টায়ারের মালিক সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক গ্রেফতার হয়েছে। প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। তার এই কারখানায় রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৪/১৫ সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মচারী চাকরি করেন। কারখানায় আগুন, লুটপাট ও হতাহতের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কারখানাটি টিকিয়ে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *