আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা বলছেন বিনা ধান-১৭ জাতের এ ধান গাছের প্রতিটি শিষে পুষ্ট দানার সংখ্যা ২৫০ থেকে ২৭০টি। প্রচলিত জাতের তুলনায় ইউরিয়া সার ৩০ শতাংশ কম এবং জমিতে ৪০ শতাংশ পানি কম লাগে। এ কারণে ‘গ্রিন সুপার রাইস’ হিসেবেও জাতটির নামকরণ হয়েছে।”
উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প মেয়াদি, খরাসহিষ্ণু, আলোক সংবেদনশীল ও উন্নত গুণাগুণের বিনা ধান-১৭ আবাদে কৃষি খাতে বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

অন্যদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে থোকায় থোকায় শোভা পেয়েছিল সবুজ ধান। ধানের গাছে থোকা থোকা শীষ দেখে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখেছিল কৃষকেরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ধানের থোকার প্রায় শীষগুলো সাদা হয়ে শুকিয়ে যাওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছেন তারা। উপজেলার ক্ষুদ্র বাঁশবাড়ী গ্রামের কৃষক সুমন পাটোয়ারী এবার প্রায় তিন বিঘা জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষাবাদ করেছেন।

সুমন পাটোয়ারী জানান, ধানের শীষ ভালোই হয়েছিল। হঠাৎ করেই ধানের প্রায় গাছের শীষগুলো প্রথমে সাদা, কালচে হয়ে পরে শুকিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অতি তাপমাত্রার কারণে এমনটি হচ্ছে। তবে এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে তারা জানিয়েছেন। কৃষক সুমন পাটোয়ারী বলেন, তারা (কৃষি বিভাগ) চিন্তার কিছু নেই জানালেও দিনের পর দিন এই রোগের বিস্তার বাড়ছে বলে তিনি মনে করছেন।

একইভাবে উপজেলার সন্ধারই, বলিদ্বাড়া, কেউটান, ভান্ডারা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনা-১৭ জাতের ধানের শীষ একইভাবে কালচে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।

সন্ধারই এলাকার কৃষক মকুল হোসেন বলেন, আগাম জাতের ধান হিসাবে বিনা-১৭ ধানটি রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ধানটি হঠাৎ করেই অজানা এই রোগে আক্রান্ত হবে বুঝতে পারিনি। বলিদ্বাড়া এলাকার কৃষক মো. বিপ্লব বলেন, প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষাবাদ করেছি। ধানের শীষ ভালোই বের হলো। কিন্তু ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমনের এ মৌসুমে উপজেলাজুড়ে এবার মোট ২১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হচ্ছে। তারা আরও জানান, বিনা-১৭ ধানের গাছটি যখন ফুল অবস্থায় থাকে সেই সময়টার ৪-৫ দিন জমিতে যেন পানি ধরে রাখা হয়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রা হলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফুল অবস্থায় জমিতে পানিতে ধরে রাখতে পারলে এই সমস্যা হবেনা। নিদিষ্ট সময়ের আগেও কৃষকরা বীজ করেন। এটিও ঠিক নয়। আমরা সবসময় এবিষয়ে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ও উঠোন বৈঠক করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে লিফলেট বিতরণ করে আগাম সব পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে কৃষকদের বিনা-১৭ ধান আবাদে আর কোন ক্ষতির সন্মুখীন হতে হবেনা।

সন্ধারই-বনগাঁও ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম জানান, এটি ধানের একটি হিট স্ট্রোক নামের রোগ। এটি অতি তাপমাত্রার কারণে সংগঠিত হয়। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় যেসব শীষ অতি তাপমাত্রায় পড়েছে সেই সব ধানের শীষই এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। নতুন করে কোনো ধানের শীষ শুকানোর সম্ভবনা খুব কম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম রবিবার মুঠোফোনে বলেন, এটি কোনো ব্যাপার না। অতি তাপমাত্রায় ধানের পরাগায়ন হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। ধান পরাগয়নের সময় জমিতে পানি থাকলে এই সমস্যাটি হতো না।

তিনি আরও বলেন, ‘বিনা-১৭ একটি স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান। এটি খরাসহিষ্ণু, ৩০ শতাংশ পানি কম প্রয়োজন হয় এর চাষে। যে জমিতে দুটি ফসল হতো, সেখানে এ জাতের ধান চাষে এখন তিনটি ফসল করা সম্ভব। বিনা ধান-১৭ স্বল্প জীবনকালীন হওয়ায় ধান কাটার পর ওই একই জমিতে কৃষক সরিষা, মসুর বা আলু চাষ করতে পারবেন।’ উপজেলার কৃষকদের এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *