রাজশাহী মহানগর ও জেলায় সব ধরনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাহারা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তবে দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অন্যায়–অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিয়মিত আন্দোলন চালাবেন তাঁরা। ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে যেকোনো ব্যক্তির আর্থিক লেনদেন, সুবিধা প্রদান ও ক্ষমতাচর্চার সব ধরনের সুযোগ প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণাসহ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানান ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক পরিষদের সদস্যরা।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সহস্রাধিক শহীদ ও দুই হাজারের কাছাকাছি আহত এবং পঙ্গুত্ববরণকারী ভাইবোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই “দ্বিতীয় স্বাধীনতা”র সূচনা। বিপ্লবপরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। পুলিশ ও প্রশাসন দায়িত্বে ফিরে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

তাঁদের সিদ্ধান্তগুলো হলো রাজশাহী মহানগর ও জেলায় সব ধরনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পাহারা থেকে শিক্ষার্থীরা সরে আসবেন। এসব স্থানে রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ তাদের কর্তব্য পালন করবে। শুধু রাত্রিকালীন নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ১০ জনের বেশি নয়, এমনসংখ্যক শিক্ষার্থী পাহারার দায়িত্বপালন করতে পারেন। তবে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তা করা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীতে কেন্দ্রঘোষিত সমন্বয়ক পরিষদ ছাড়া কোনো ধরনের সমন্বয়ক নেই; রাবি পরিষদসহ ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে যেকোনো ব্যক্তির আর্থিক লেনদেন, সুবিধা প্রদান কিংবা ক্ষমতাচর্চার সব ধরনের সুযোগ প্রতিহত করা; দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অন্যায়–অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিয়মিত আন্দোলনের বাইরে রাজশাহী জেলা ও মহানগরের অন্যান্য কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, শহরে বিশৃঙ্খলা তৈরি ও আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেকেই সমন্বয়ক, সহসমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী পরিচয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এগুলো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মেশকাত বলেন, ক্যাম্পাসে সব প্রকার লেজুরবৃত্তিভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে রাকসু চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সব সময় রাজপথে সোচ্চার থাকবেন।

উপাচার্যসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ না থাকায় এখনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আরেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের দ্রুত নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো ফিরিয়ে আনতে তাঁরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাবেন। এ ছাড়া অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *